রাজধানী উন্নয়ন ফোরাম

আমাদের প্রাণের উলিপুর

আমাদের প্রাণের উলিপুর, কুড়িগ্রাম জেলার এক গৌরবময় অংশ। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা আর দুধকুমার নদের মায়াবী পরশে ঘেরা এই উপজেলা, তার সবুজ প্রকৃতি আর উর্বর কৃষিজমি নিয়ে এক অনন্য সৌন্দর্যের আধার। দেশের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা হিসেবে, ৫০৪.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জনপদ ১টি পৌরসভা, ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৪৭টি মৌজা এবং ৩৫৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত, যার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণের স্পন্দন। প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের আবাসস্থল এই উলিপুর। আমাদের জনসংখ্যার ৩৫% যুবক, যারা এই মাটির ভবিষ্যৎ। তাদের উদ্যম আর সম্ভাবনা নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি। শিক্ষা প্রসারে আমাদের রয়েছে ১০টি কলেজ, ৬৮টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২৫টি মাদ্রাসা এবং ১৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা আমাদের আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করছে। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি, যেখানে মোট ভূমির ৮০% কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয় এবং ৭০% জমি সেচের আওতাভুক্ত। ধান, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, সরিষা, আখ ও সবজির মতো অর্থকরী ফসল আমাদের মাটিকে সমৃদ্ধ করে। এছাড়াও, ৭৩০টি কুটির শিল্প এবং ৫৩টি প্রাণবন্ত হাটবাজার আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। পাট, সুপারি, পান, পিঁয়াজ, রসুন আমাদের প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। ১৮০ কিমি পাকা রাস্তা এবং ৪৪৬ কিমি কাঁচা রাস্তা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুগম করেছে। উলিপুর শুধু একটি উপজেলা নয়, এটি আমাদের পরিচয়, আমাদের গর্ব। এই মাটি ও মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এক নতুন উলিপুর গড়ার স্বপ্ন দেখি।

আমাদের বর্তমান উলিপুর

যেখানে সম্ভাবনা অধরা

উলিপুর, কুড়িগ্রামের একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা, যেখানে জীবনযাত্রা প্রতিনিয়তই নানা সংকটে জর্জরিত। এখানকার প্রায় ৭০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যার মধ্যে চরম দারিদ্র্যে রয়েছে ৪৪%। মৌসুমি "মঙ্গা" দুর্ভিক্ষ তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে। উলিপুর উপজেলায় নিরক্ষরতার হার (৪৪.৬%) জাতীয় গড়ের (২৫.৩%) চেয়ে ১৯.৩% বেশি। বেকারত্ব (৬-৭%) জাতীয় গড়ের (৪.২%) চেয়ে প্রায় ২-৩% বেশি। দারিদ্র্যের হার (৩০% বা বেশি) জাতীয় গড়ের (১৮.৭%) চেয়ে ১১.৩% বা তারও বেশি। এছাড়া, চিকিৎসক প্রতি জনসংখ্যা (১:৫০০০ বা বেশি) জাতীয় গড়ের (১:১৬৬৭) তুলনায় অনেক কম এবং নদী ভাঙনজনিত বাস্তুহীনতা একটি গুরুতর সমস্যা। প্রতিবছর নদীভাঙন ও বন্যায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, কৃষি জমি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। অথচ নেই টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ বা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলে শিক্ষার হার মাত্র ৪৫.৬% এবং ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। এখানকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি, কিন্তু শিল্পায়নের অভাব এবং দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, ক্রীড়া অবকাঠামোসহ মৌলিক নাগরিক সুবিধাও অপ্রতুল। ডিজিটাল সেবায় অনুপ্রবেশ কম, ফলে তৈরি হয়েছে এক ধরনের "ডিজিটাল বঞ্চনা"। এর পাশাপাশি দারিদ্র্য থেকে জন্ম নিচ্ছে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও মাদকাসক্তির মতো সামাজিক ব্যাধি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ছে, বিশেষত দুঃসহ জীবনযাপন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। পানিতে আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকি এবং নদী খননের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্থানীয় সরকার সীমিত অর্থ ও দক্ষতার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সকল চ্যালেঞ্জ উলিপুরকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এখানেই রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনার অপার সুযোগ।

আমাদের বর্তমান উলিপুর

আমাদের স্বপ্ন সমৃদ্ধ উলিপুর

Image 3
Image 4

ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী মনে করেন স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান সেই অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। ২৪শের ৩৬ জুলাই গণবিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী ফিরে এসেছেন তাঁর জন্মভূমি উলিপুরে। তিনি এসেছেন অলিপুরের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, একটি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাতে। ব্যারিস্টার সালেহীর অঙ্গীকার সকলকে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ অলিপুর গড়া। সে লক্ষে আমাদের প্রাণের উলিপুর নিয়ে উনার নেতৃত্বে উলিপুর উন্নয়ন ফোরাম এর সমৃদ্ধ উলিপুর ভিশন নিম্নরুপ:

ফাইভ জিরো প্রকল্পের উলিপুর

(নিরক্ষরতা, কর্মহীনতা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, গৃহহীনতা, ও চিকিৎসাহীনতা মুক্ত উলিপুর)

ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী উলিপুরকে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও মানবিক জনপদে রূপান্তরের জন্য সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাঁর স্বপ্ন—পাঁচটি বড় সমস্যামুক্ত উলিপুর গড়ে তোলা, যেখানে থাকবে না নিরক্ষরতা, কর্মহীনতা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, গৃহহীনতা ও চিকিৎসাহীনতা।

শিক্ষিত ও দক্ষ উলিপুর

মানসম্মত শিক্ষা ও ১০০% সাক্ষরতা অর্জনই উন্নয়নের প্রথম ধাপ। এজন্য ‘ওয়ান-ফর-অল’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজন দক্ষ ও কর্মক্ষম সদস্য তৈরির লক্ষ্য নিয়েছেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সুবিধাসম্পন্ন স্মার্ট স্কুল, ফ্রিল্যান্সিং ও আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্লোবাল ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম, এবং খেলাধুলা, ডিজাইন, স্থাপত্য, আইটি ও ইসলামিক স্কলার তৈরির উদ্যোগ তাঁর পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত।

কর্মসংস্থান সমৃদ্ধ উলিপুর

কর্মসংস্থান সমৃদ্ধ উলিপুর গড়ে তুলতে তিনি এসইই (Skill, Employment, Empowerment) প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যা প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে একজনের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিপ্লব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পুঁজি, প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগ, স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং, নারী পরিচালিত কুটির শিল্প উন্নয়ন, পরিকল্পিত মাছচাষ, নদীকেন্দ্রিক জীবিকা, শিল্প পার্ক স্থাপন এবং দেশি-বিদেশি চাকরি ও উদ্যোক্তা তথ্যের জন্য ক্যারিয়ার হাব গঠন—এসবই তাঁর কর্মপরিকল্পনার অংশ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনে তিনি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ, আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র, নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প, নদী ড্রেজিং, জলবায়ু সহনশীল কৃষি, বৃক্ষরোপণ এবং ত্রাণ, চিকিৎসা ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

আধুনিক সংযোগ ও পর্যটন

আধুনিক সংযোগ ও পর্যটনে তিনি উন্নত সড়ক, সেতু, বাঁধ, বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সুবিধা বৃদ্ধি, বাজার ও হাট আধুনিকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং উলিপুরকে বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন।

স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত উলিপুর

স্বাস্থ্যখাতে তিনি মোবাইল স্বাস্থ্য ইউনিট, সরকারি হাসপাতালের আধুনিকীকরণ, ‘গ্রাম ক্লিনিক থেকে স্পেশালিস্ট’ রেফারেল সিস্টেম, প্রতিটি ওয়ার্ডে হেলথ ভলান্টিয়ার, মডেল গ্রাম প্রকল্প, বিধবা-প্রতিবন্ধী-প্রবীণ সহায়তা, এবং ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন।

🧑🏻‍🌾

স্মার্ট কৃষি ও সমৃদ্ধ বাজার

স্মার্ট কৃষি ও বাজার উন্নয়নে স্মার্ট প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, কৃষি ক্লিনিক, নদী ও খাল পুনঃখনন, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

🛥️

স্বনির্ভর চর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন

চরাঞ্চল উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, রোড ও নৌপথ সংযোগ, ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ইউনিট, বালি ও খনিজভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা, ফাইভ জিরো ও এসইই প্রকল্প, চরভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং কৃষিভিত্তিক বিকল্প উন্নয়ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছেন।

সুশাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা

সুশাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন, গণশুনানি, দুর্নীতিবিরোধী কমিটি, নারী-সংখ্যালঘু-প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা, জিরো ক্রাইম কমিউনিটি, দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল স্থানীয় সরকার, বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সরকারি সেবার মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আমাদের উলিপুর আমাদের গর্ব, সমৃদ্ধ উলিপুর আমরাই গড়বো।